iti apu by Soumitra Chatterjee || ইতি অপু - সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।।

Поділитися
Вставка
  • Опубліковано 11 вер 2024
  • ইতি অপু
    -সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
    পুলু, কেমন আছিস, ভালো?
    বড় তারাতারি নিভে যাচ্ছে এই কলমের আলো।
    মাঘ কুয়াশার চেয়েও ঝাপসা হচ্ছে অক্ষর,
    কোথা দিয়ে কেটে গেলোরে এতগুলো বছর?
    যেন রেলের চাকায় বেঁধেছিলো কেউ দিনঘড়িটার কাটা,
    অনেক কষ্টে জোগার করেছি তোর ঠিকানাটা!
    এই দেখ! পরিচয়টাই দেয়া হয়নি কথায় কথায়!
    চিনতে পারছিস? রোল ফরটি-সিক্স, অপূর্ব কুমার রায়।
    তোর সাথে শেষ দেখা, নাগপুর কোলীয়ারী।
    তারপর জানিস? খুলনা গিয়েছিলাম অপর্ণাদের বাড়ি।
    খুলনাতো এখন বাংলাদেশ।
    ওখানে কে থাকে,
    আমি ছাড়া তোকে এখনো কেউ পুলু বলে ডাকে?
    কাজল এখন বিয়ে করেছে, চাকরি করছে কোলকাতায়।
    সেসব যাক, এবার আসি যেজন্য চিঠি সেই কথায়।
    জানিনা, কোত্থেকে শুরু করব, ঠিক কোন দুঃখ ভোগ?
    তোর সাথে প্রায় ত্রিশ বছর পরেতো যোগাযোগ!
    তুই বলবি আমার দোষ, রাখিসনি কেন যোগাযোগ?
    যোগ আর যোগ রাখব কোথায়, আয়ূষ্কালে শুধুই বিয়োগ!
    ছ’য়ে দিদি, দ’শে বাবা, সতেরতে গেলেন মা!
    আর বাইশ বছর ফাগুন মাস, যেদিন গেলো অপর্ণা!
    আর শুধু ওরাই নাকি? কয়লার ট্রেন, দুঃখ পুকুর,
    গরুর গাড়িটাও ছেড়ে দিয়েছে কাঁশফুলে ঢাকা নিশ্চিন্তপুর!
    বাবার উপর টান বলতে, খুব রোগা আর পলকা দড়ি।
    রোগা দড়ি হেটে নামতো কাঁশিঘাটের চৌষট্টি সিঁড়ি।
    বাবার আর লেখা হলোনা গ্রাম জাগানো মহৎ পালা!
    দীর্ঘশ্বাসে চাপা সংলাপ, শুধু শুনতে পেলো গণেশ মহোলা।
    এখন মাঝেমাঝে স্বপ্নে আসেন,
    হরিহর পালা গিতিকার আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বলেন,
    “ঐ যায় শবযাত্রা আমার!
    হরিধ্বণি দাও হে সবে, দুহাতে ওড়াও বিণ্ণী খৈ,
    বাঁশের মাচায় শুয়ে চলেছেন, না লিখতে পারা আমার বই।”
    ফিরে এলাম দেশের বাড়ি, ঘুরলো আবার রেলের চাকা।
    সম্বল বলতে গলার পৈতে, মা-র জমানো ছত্রিশ টাকা।
    পল্লীবাড়ি একি আছে, ধোয়াটে মাঠ, কাঁশের বন।
    নতুন একটা শব্দ শিখলাম, স্যারের কাছে, “এম্বিশন।”
    লিভিংস্টোন পড়ছি যখন কবে যাবো আফ্রিকায়?
    দেবতাকে অভুক্ত রেখে, এই পূরুতের ছেলে জলপানি পায়!
    মাকে ছেড়ে, পল্লী ছেড়ে, পূরুতের ছেলে দূর পালালো,
    দুর বলতে কোলকাতা, তেতলা বাড়ি, ইলেক্ট্রিক আলো।
    অখিল বাবুর রোয়্যাল প্রেসে সারারাত জেগে কাজ করতাম।
    নতুন বইএর মোলাট দেখলেই ইচ্ছে হত, লেখি বাবার নাম।
    একদিন একটা চিঠি এলো, মায়ের নাম লেখা তাতে,
    মা লিখছেন ভাঙ্গা ছন্দে, মা লিখছেন কবিতাতে।
    “অপু, আমার মাথার উপর উড়ছে জানিস, রাতের আকাশ।
    কদিন পরেই গণেশ পূজো, তোরা কলেজে ছুটি কি পাশ?
    চারা গাছটা পুতে গেছিলি, কদিন হলো দেইনি জল,
    গণেশ পুজোয় না এলেও তুই অঘ্র্যাণ মাসে আসবি বল?
    কদিন ধরেই জ্বরটা আসছে, বলা হয়নি কথায় কথায়,
    তোর তেতলা জানালা থেকে গ্রামের রাতটা দেখা যায়!
    অপু, আমার মাথার উপর আকাশ ভাঙছে, উহ্! কি কালো!
    পাঠাবিরে জোঁনাকি ঘুম, পাঠাবিরে ইলেক্ট্রিক আলো?”
    সেই থেকে-তো শ্বশানের কাঠ, গারহস্তে আমার হলো অক্ষয়।
    যারা চলে যায়, কে বল্লো শুধু তাদেরি শব দাহ হয়?
    প্রথমে প্রথমে পুড়ে যেতাম, নতুন বিয়োগ চড়া আঁচে!
    দেখ, সন্তাপ কথাটাতেও তাপ কথাটা লুকিয়ে আছে!
    একদিন তখন হবিষ্যি চলছে, এটো ছিটিয়ে ডাকছি কাক।
    হঠাৎ মনে হলো, একি করছি, আমি-না হিমাদ্রী নন্দন মৈণাক!!!
    সেই থেকেতো পালানো শুরু, থাকতে দেবে বৃক্ষবন?
    তোমার সবুজ পাতার ভিরে রাখবে আমায়, রাখবে গোপন?
    গাছ দেখলেই ভয় করেযে, চিতা কাঠ বড্ড ভয়!
    শরীর জুরালো হঠাৎ করে, হঠাৎ শরীরে সূর্যোদয়!
    মা, অপর্ণা মুছে গেলো এদের মুখের টুকিটাকি।
    বলেই ফেল্লো অপর্ণার ছবি, হা করে দেখছো! আমি নতুন নাকি?
    পুলু, একটা সত্যি কথা, এবার তবে বলি তোকে,
    আমি মরে যাচ্ছি যণ্ত্রণাতে, আমি মরে যাচ্ছি বিচ্ছেদ শোকে!
    দিদি, বাবা, মা, অপর্ণা এরা না। কার কথা বলছি জানিস?
    একটু ভালো করে মনে করে দেখ, তুইও ওদের খুব কাছ থেকে চিনিস।
    মনে পরে সেই খুলনা যাওয়া পদ্মা নদী, ছবির সেট?
    হঠাৎ তুই ডাকলি আমায়, হাতটা দে-না এডিয়েট।
    হে, ঐ গল্পের পাতা, আমার অপ্রকাশিত প্রথম বই।
    গল্পের শুরুটা তুইও জানিস, গল্পের শেষটা গেলো কই?!
    সেদিন গল্পে ঝিঁঝি ডাকছিলো, মাথার উপর বৃক্ষছাতা।
    সূর্যোদয়কে সামনে পেয়ে, উড়িয়েছিলাম গল্পের পাতা।
    ওরা কি সব ওখানেই আছে? চালে ডালে পাতা সংসার।
    সংসার না বৈরাগ্য? কি জীবণ হয় ছেড়া পাতার?
    এসব আমার জানা দরকার। এসব আমার জানা প্রয়োজন।
    ব্যার্থ লেখক অপূর্ব রায়ের ওরাই হলো আত্মা স্বজন।
    ওরা আমার সাথে বাসে ওঠে, আমার সাথে অফিস করে।
    শুধু পেছন ফিরে দেখতে গেলেই, ওরা বৃক্ষ বনে লুকিয়ে পরে!
    আর যখন ঘুমিয়ে পরি, ওরা স্বপ্নে আসে অহরহ।
    আসলে শুধু ছেড়ে এসেছিতো, কখনো ওদের করিনি দাহ।
    এখন আমার মায়ের বয়স, সন্ধে হলেই আসে জ্বর।
    বাবা বসে জল শেক দেয়। বলে অপু, লেখাটা শেষ কর।
    পশ্চিমের টিকেট কেটেছি ভোর হলেই রওনা হব।
    খেলনা, মুখোশ, কলের গাড়ি; ওদের জন্য কি কি নেব?
    গল্পটা যদি জিজ্ঞেস করে, এতদিন পর তুমি এদিকে?
    আমি তাহলে সেদিনের সেই অবাক করা সূর্য ডেকে,
    সব অধিকার ছেড়ে দেব।
    লেখক, পিতা সব সব
    লেখক শর্ত বিনীময়ে ফিরে পাবে ওরা শৈশব।
    গোপন বলতে নিজের কাছে একটা নাম রাখবো শুধু, একটা নাম রাখবো শুধু,
    পিতা নয় লেখক নয় স্বার্থ নয় শুধু বন্ধু।
    চল্লাম পুলু, জানাবো তোকে কি দেখলাম ছেড়া পাতায়।
    ভালো থাকিস বইটা ছাপিস।
    - ইতি অপু।

КОМЕНТАРІ • 9

  • @milidas3056
    @milidas3056 2 місяці тому +2

    আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ সৌমিত্র বাবু। ওনাকে হারিয়ে খুব কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু মননে চির জাগ্রত। ❤❤❤

  • @mnislam9501
    @mnislam9501 3 місяці тому +2

    Dada opare bhalo thako .Tomake onek miss kore.

  • @soniasarkar
    @soniasarkar 6 місяців тому +1

    অসাধারন স্যার🙏🏻🙏🏻

  • @anjanakar9067
    @anjanakar9067 2 місяці тому +1

    🙏🙏Apurbo sir opare bhalo thakben

    • @Kushalmotivation1
      @Kushalmotivation1  2 місяці тому

      আমার চ্যানেলে আপনাকে স্বাগত ❤❤।
      অসম্ভব সুন্দর কবিতা, তাঁর কবিতা শুনতে চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন ❤🙏

  • @samiranbandyopadhyay5635
    @samiranbandyopadhyay5635 8 місяців тому +2

    Aro uoload korun, thanks ❤

    • @Kushalmotivation1
      @Kushalmotivation1  8 місяців тому

      হ্যাঁ, আরও ভিডিও আসবে ।
      চ্যানেলটি শেয়ার এবং সাবস্ক্রাইব করুন এরকম কবিতা অনুভব করতে।
      ধন্যবাদ আপনাকে 🙏

  • @utpalgupta7736
    @utpalgupta7736 7 місяців тому +3

    Asadharon

    • @Kushalmotivation1
      @Kushalmotivation1  7 місяців тому

      খুব সুন্দর একটি কবিতা ❤।
      আরও অনেক কবিতা আছে শুনুন।
      চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও শেয়ার করতে ভুলবেন না।
      ধন্যবাদ ❤