Debabrata Biswas LIVE in the 1970s - Pt 35 (‘রবির আলোয় দেবব্রত’ - রবীন্দ্রসদনে গীত ৫টি গানের সংকলন)

Поділитися
Вставка
  • Опубліковано 12 вер 2024
  • রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে প্রকাশিত হল ‘৭০-এর দশকে জর্জদা’-র পঞ্চত্রিংশতিতম অর্থাৎ ৩৫-তম পর্ব। এবারের পর্বের নাম - ‘রবির আলোয় দেবব্রত’। এই পর্বের পাঁচটি গানের মধ্যে ‘আলো’ শব্দটির (বা তার প্রতিশব্দর) আবির্ভাব হয়েছে ঘুরে ফিরে। রবীন্দ্রনাথের গানে কবিতায় ‘আলো’ শব্দটি এসেছে বারে বারে নানা রূপে। শোনা যায় রাতের আকাশে তারার দিকে চেয়ে থাকা কবির একটি ভালোলাগার বিষয় ছিল। তাই হয়তো কবি লিখেছেন - ‘চেয়ে রই রাতের আকাশ পানে, মন যে কি চায় তা মনই জানে’ বা ‘আজি যত তারা তব আকাশে’ অথবা ‘আজ তারায় তারায় দীপ্ত শিখার অগ্নি জ্বলে নিদ্রাবিহীন গগনতলে’। এই শেষোক্ত গানে রবীন্দ্রনাথ এমন কিছু কথা লিখেছেন, যা যখনই পড়ি, আমার গায়ে কাঁটা দেয়। জানি না, রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্বরূপ বর্ণনা করেছেন কিনা গানের ছলে। গানের কথাগুলি আরও একবার স্মরণ করি -
    আজ তারায় তারায় দীপ্ত শিখার অগ্নি জ্বলে
    নিদ্রাবিহীন গগনতলে॥
    ওই আলোক-মাতাল স্বর্গসভার মহাঙ্গন
    হোথায় ছিল কোন্ যুগে মোর নিমন্ত্রণ--
    আমার লাগল না মন লাগল না,
    তাই কালের সাগর পাড়ি দিয়ে এলেম চ'লে
    নিদ্রাবিহীন গগনতলে॥
    সত্যিই কি রবীন্দ্রনাথ নামক কোনো দেবতা স্বর্গসভা থেকে নেমে এসেছিলেন কালের সাগর পাড়ি দিয়ে আমাদের মর্তের নিদ্রাবিহীন গগনতলে? লুকিয়ে রেখেছিলেন আত্মপরিচয়?
    তবে কখনো কখনো আত্মপরিচয় যে গোপন করতে রবীন্দ্রনাথ পছন্দ করতেন তার প্রমাণ কিন্তু তিনি একাধিকবার রেখে গেছেন। ধরা যাক তাঁর ‘ভানুসিংহ’ নাম। ১২৮৪ বঙ্গাব্দে মাত্র ষোলো বছর বয়সে ‘ভারতী’ পত্রিকায় পদাবলী প্রকাশ কালে রবীন্দ্রনাথ সর্বপ্রথম ‘ভানুসিংহ ঠাকুর’ ছদ্মনামটি গ্রহণ করেন। তবে ভানুসিংহ-ই শেষ নয়। রবীন্দ্রনাথ নানা সময়ে একাধিক ছদ্মনাম গ্রহণ করেছেন; আড়াল করেছেন আত্মপরিচয়। ১২৮৭ বঙ্গাব্দের ভারতী পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘দুদিন’ নামে একটি কবিতা ছাপা হয়। কবির নাম দিকশূন্য ভট্টাচার্য। পরে জানা যায় এটি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। একই ভাবে ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের প্রবাসী পত্রিকায় একটি সমালোচনা প্রকাশিত হয় যার শিরোনাম - ‘রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে রেভারেন্ড টমসনের বহি’। সমালোচকের নাম বাণীবিনোদ বিদ্যাবিনোদ। এই বাণীবিনোদ বিদ্যাবিনোদ আর কেউ নন; স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। ১৩৪৬ বঙ্গাব্দে সজনিকান্ত দাস সম্পাদিত ‘অলকা’ পত্রিকার অগ্রহায়ণ সংখ্যায় প্রকাশিত হল আন্নাকালী পাকড়াশী রচিত ‘নারীর কর্তব্য’ কবিতা। এটিও রবীন্দ্রনাথেরই ছদ্মনাম। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে রবীন্দ্রনাথকে আরও কিছু ছদ্মনাম ব্যবহার করতে দেখা গেছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য - অকপটচন্দ্র ভাস্কর, নবীনকিশোর শর্মন, ষষ্টিচরণ দেবশর্মা, শ্রীমতী কনিষ্ঠা এবং শ্রীমতী মধ্যমা।
    দেবব্রত বিশ্বাস-ও রবীন্দ্রনাথের মত নিজের পরিচয় গোপন করার প্রয়াস করেছেন একাধিকবার। ১৯৭৮ সন - ২৫শে বৈশাখ। আপনারা সকলেই জানেন যে সেই সময় রবীন্দ্রসদন প্রাঙ্গণে রবীন্দ্রজন্মোৎসব কি বিপুল সমারোহে পালিত হত। রবীন্দ্রসঙ্গীত জগতের প্রায় প্রত্যেক নামীদামী শিল্পী উপস্থিত থাকতেন সেই অনুষ্ঠানে। সে বছর দেবব্রত বিশ্বাসকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল অনুষ্ঠানে গান গাইবার জন্য, কিন্তু শারীরিক কারণে তিনি আসতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। কয়েক শো মানুষ গান, কবিতা শুনে যাচ্ছেন বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে, হঠাৎ দেখা গেল একজন মানুষকে লুঙ্গি ও হাতাওয়ালা গেঞ্জি পরিহিত, চোখে কালো গগলস এবং মাথায় লাল চেক গামছার ফেট্টি! সেও গান শুনছে একমনে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে জনতা চিনে ফেলল আগন্তুককে। আরে, এতো ছদ্মবেশী জর্জদা। আর যায় কোথায়? ধরা পড়ে গেলেন - ছবিও তোলা হল তাঁর সেই বেশে।
    দেবব্রত বিশ্বাসের নিজেকে আড়াল করার আরেকটি গল্প বলেছিলেন প্রখ্যাত মূকাভিনেতা যোগেশ দত্ত। যোগেশ বাবু লিখছেন, ‘এক ভদ্রলোক একদিন এলেন আমি থাকতেই। জর্জদা বললেন, “কি চাই?” ভদ্রলোক বললেন, “আমি দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে এসেছিলাম।” জর্জদা বললেন, “জানেন না, তার তো অসুখ; সে হাসপাতালে আসে। আমি রান্না করতাসি। রান্না কইরা তারে দিয়ে আসুম।” ভদ্রলোক ইতস্তত করে বললেন, “এই মিষ্টিগুলো রেখে দিন দয়া করে।” জর্জদা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, “আরে না, না আপনে লইয়া যান। সে তো পিজি-তে।” উনি চলে যেতেই আমরা বললাম, “এটা কি করলেন জর্জদা?” জর্জদা নির্বিকার চিত্তে বললেন, “আমার এখন মিষ্টি খাওয়া বারণ। মিষ্টিগুলি রাখলে তোমরা আমার সামনে বইস্যা বইস্যা খাবা আর আমি দেখুম? তার চেয়ে ভদ্রলোক বাড়িতে নিয়া গেলেন হেইডাই তো ভালো হইল।”
    জর্জদার অত্যন্ত প্রিয় ছাত্রী পদ্মিনী দাশগুপ্ত (ঘোষ) আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। পদ্মিনীদির কাছে প্রায় একই রকম একটি গল্প শুনেছিলাম। সেবারে একটি মেয়ে এসেছে দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে তার সঙ্গে আলাপিত হবে বলে। তাকেও দেবব্রত বিশ্বাস তাকেও সটান বলে দিলেন, “দেবব্রত বিশ্বাস তো পিজি হসপিটালে এডমিটেড। ৫৬ নম্বর বেড; দেখেন গিয়া এখনো বাইচ্যা আসে কিনা...” মেয়েটি দেবব্রত বিশ্বাস কে আগে দেখেছে মঞ্চে; তাই মনে সন্দেহ হলো তার। মেয়েটি বলল, “তাহলে আপনি কে? আপনি তো দেবব্রত বিশ্বাসের মতোই দেখতে।” জর্জদা আরেকবার কাটাবার চেষ্টা করলেন। করুন মুখে বললেন, “আমি তো ওর ভাই; রান্না করতাসি। খাবার পিজি হাসপাতালে লইয়া যাইতে হইব তো।” মেয়েটি বলল, “কখনোই না, আপনিই দেবব্রত বিশ্বাস।” এইবার দেবব্রত বিশ্বাস হেসে ফেললেন। পদ্মিনীদির দিকে চেয়ে বললেন, “কাম সারসে, মাইয়া তো দেখি আমায় চিনন্যা ফ্যালাইসে।”
    ছদ্মনাম নেওয়ার ব্যাপারেও সবিশেষ পটু ছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস। অধীপ চৌধুরী মহাশয়ের পিতা নবেন্দু চৌধুরী মহাশয়ের রচিত একটি গানে সুর করে রেকর্ড করতে গিয়ে দেবব্রত বিশ্বাস গানটির সুরকারের নাম উল্লেখ করেছিলেন শিবানন্দ কিশোর গুঁই। আর গায়কের নাম বলেছিলেন জনাব দেবালি খান। নিজের বহু ভক্তকে ছবি এঁকে তলায় সই করতেন সেই দেবালি খান ছদ্মনামে। ইউটিউবে গানটি (চরণে তোমার দাও মোরে ঠাঁই) আপলোড করেছি আমি।
    রবীন্দ্রসদনে গীত এবারের লাইভ প্রোগ্রামের গানগুলিও স্বর্গত আলো কুণ্ডুর সংগ্রহ থেকে। তাঁকে জানাই আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
    নমস্কারান্তে,
    জয়ন্তানুজ ঘোষ
    ২৩শে মে, ২০২৪

КОМЕНТАРІ • 24