ছবি বিশ্বাসের জীবনের কিছু অজানা কথা

Поділитися
Вставка
  • Опубліковано 7 вер 2024
  • ছবি বিশ্বাসের জীবনের কিছু অজানা কথা
    জোরকদমে ট্রেন চলেছে। গন্তব্য ভাগলপুরের কাছেই একটি জায়গা, নাম সুলতানগঞ্জ। সিনেমার আউটডোর শুটিং হবে; ট্রেনে মালপত্তরের সঙ্গে চলেছেন বাংলা সিনেমার তারকারা। বিশ্বজিৎ, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, তরুণকুমার এবং আরও অনেকে। সেখানেই রাতের বেলা একদিন এক মহা কাণ্ড! সুলতানগঞ্জের ঘরে সবাই ঘুমিয়ে আছেন। হঠাৎ একটা শব্দ হল। মাঝরাতে এমন আওয়াজ কোথা থেকে এল? তরুণকুমারের ঘুমটা ভেঙে গেল। চোখ একটু কচলে দেখলেন এক দৃশ্য। বিশ্বজিতের পায়ের সামনে একটা মস্ত বড়ো ছায়া! একে অচেনা জায়গা, তার ওপর গভীর রাত, অন্ধকার- ভয় লাগাটা স্বাভাবিকই।
    তরুণকুমারও ঘাবড়েই গেলেন। বড়ো ছায়াটা একটু টলছে, একটু যেন হাঁপাচ্ছেও। হঠাৎ বিশ্বজিতের পা ধরে মশারির ভেতর ঢুকিয়ে দিল সেই ‘ছায়া’! তারপর ফিরে গেল ঘরেরই এক কোণে। ততক্ষণে ভয়টা কেটেছে তরুণকুমারের। ছায়াকেও চিনতে পেরেছেন তিনি। এই মানুষটিও যে ট্রেনে চেপে তাঁদের সঙ্গে এসেছেন। ইনি ছাড়া তো কাজই হবে না। ছায়া হোক বা আলো, ছবি বিশ্বাসকে চিনে নিতে কখনও অসুবিধা হয় নাকি! আর কোন সিনেমার শুটিং, আন্দাজ করতে পারছেন? ‘দাদাঠাকুর’!
    অন্ধকারে ছবি বিশ্বাসের ছায়া যেমন মস্ত ছিল, মানুষটাও ছিলেন দেমন বিরাট মাপের। তাঁর অভিনয়, ব্যক্তিত্ব, ম্যানারিজম নিয়ে বক্তব্য রাখার দৃষ্টতা নেই। ‘দাদাঠাকুর’ থেকে ‘জলসাঘর’, ‘কাবুলিওয়ালা’ থেকে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’- বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমার জগতে একের পর এক অমর সিনেমা ও চরিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিনয়, চাল-চরণ সবকিছু দর্শকদের টানত। সেইসঙ্গে আরও একটি জিনিসও দর্শকদের কাছে বড্ড প্রিয় ছিল। সেটা ছবি বিশ্বাসের ডায়লগ বলার সিগনেচার স্টাইল। এমনকি আজও হাসির অনুষ্ঠানে অনেকেই সেই কথা বলার ধরণ নকল করেন। সেটাই হয়ে গেছে ‘ছবি বিশ্বাস’। কিন্তু এর পেছনের গল্পটা খুব মধুর নয়। ছবি বিশ্বাসের এমন করে কথা বলার কারণ, তাঁর অ্যাজমা। প্রচণ্ড অ্যাজমার সমস্যায় ভুগতেন। রাতে ভালো করে ঘুমোতেও পারতেন না। সেজন্যই একটু থেমে থেমে কথা বলতেন। তখন কে জানত, এটাই সিগনেচার ছবি বিশ্বাস হয়ে যাবে!
    ছবি বিশ্বাসের অভিনয় জীবন ছিল যেমন রঙিন, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি বর্ণময় চরিত্র ছিলেন। নিজের সঙ্গে সবসময় থাকত একটি রুপোর ডিবে। তার ভেতর সাজানো থাকত পান আর জর্দা। বাড়ি হোক বা শুটিং, রিহার্সাল- মুখে একটা পান থাকা চাইই চাই। অভিনয়ের আসল সময় অবশ্য সেসব ফেলে দিতেন। তখন তিনি অন্য জগতের মানুষ। পান ছাড়াও আরও দুটি জিনিসের প্রতি আসক্তি ছিল। সিগারেট, এবং মদ। আক্ষরিক অর্থে ছিলেন চেনস্মোকার। আরব থেকে আসত তাঁর ব্র্যান্ডেড সিগারেট। কিন্তু একসময় সেই সিগারেটও ছেড়ে দিলেন। কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলতেন, ছেলেদের সিগারেট চুরি করতে দেখে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেওয়া। আর ‘জলসাঘর’-এর জমিদারকে মদ না ছাড়া মানায় নাকি!
    এসবের বাইরে আরও একটা শখ ছিল ছবিবাবুর। রান্নার। মাংস তো বটেই, বড়ি, ঝিঙে-পোস্ত, মাছ- অনেক কিছুই ছিল নখদর্পণে। তবে আরও ভালো পারতেন অভিনয়ের চরিত্র ও অভিনেতাদের পড়তে। তরুণকুমারের এক অভিজ্ঞতা এখানে উল্লেখ্য। সেটা ছিল ‘অবাক পৃথিবী’ সিনেমার শুটিংয়ের আগে। তরুণকুমার নিজের প্রযোজনায় ছবিটি করছেন। তাঁর ইচ্ছা, ফাদার রেক্টর ব্যানার্জির চরিত্রটা ছবি বিশ্বাস করুন। সেই হিসেবে গেছেনও তাঁর বাঁশদ্রোণীর বাড়িতে। আড্ডাও চলছে, স্ক্রিপ্ট আর চরিত্র বোঝানোও চলছে। ছবি বিশ্বাসের প্রচণ্ড ভালো লাগে চরিত্রটি। গল্পটিও ভালো। কিন্তু গোল বাঁধল অন্য জায়গায়। চূড়ান্ত প্রফেশনাল ছবি বিশ্বাস নিজের পারিশ্রমিক থেকে খুব একটা পিছু হটলেন না। এদিকে তরুণকুমারেরও বাজেট সমস্যা, কিন্তু খুব করে চাইছেন ছবি বিশ্বাস এখানে অভিনয় করুক। এমনকি, দাদা উত্তমকুমারও এসে বললেন তাঁকে। তখনই ছবিবাবুর মুখ থেকে বেরিয়ে এল এক আশ্চর্য উপদেশ। তাঁর মতে, ফাদার রেক্টর ব্যানার্জির চরিত্রটা স্বয়ং তরুণকুমারই করতে পারবে। এবং সেটাই নাকি হবে সঠিক কাজ। শেষ পর্যন্ত তরুণকুমার অভিনীত সেই চরিত্রই শ্রেষ্ঠ সহ-অভিনেতার পুরস্কার জেতে।
    এরকমই মানুষ ছিলেন ছবি বিশ্বাস। নিজের অভিনয়, পেশাদারিত্ব নিয়ে যেমন কোনো আপোস করেননি; তেমনই অন্যান্যদের ক্ষমতাকেও ছোটো করেননি। বরং বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন। উত্তমকুমার তো তাঁর কাছে স্নেহের ‘বড়ো হনুমান’! এ হেন মানুষটির জীবনই একটা অসীম যাত্রাপথ।
    #history
    #movie
    #bengalimovie
    #timetraveller
    #bengalivlog
    #bengalioldhitmovie
    #bengalioldhitmoviesong

КОМЕНТАРІ • 2