হোগলাপাতা দিয়ে তৈরি হস্তশিল্প বদলে দিয়েছে উপজেলার কর্মহীন নারী-পুরুষের জীবন

Поділитися
Вставка
  • Опубліковано 24 жов 2023
  • হোগলাপাতার দড়িতে ভাগ‍্যের পরিবর্তন ঘটচ্ছে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার হাজারো মানুষের।হোগলাপাতা দিয়ে তৈরি হস্তশিল্প বদলে দিয়েছে উপজেলার কর্মহীন নারী-পুরুষের জীবন। গ্রামীণ জনপদের হতদরিদ্র মানুষ হোগলা পাতার দড়ি দিয়ে বাহারি হস্তশিল্প তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। শুধু তাই নয়, এসব পণ্য ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের ২৮টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
    বেলাব উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে বিন্নাবাইদ ইউনিয়নের জুহুরিয়া কান্দা গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের হোগলা পাতার বাহারি পণ‍্যের হস্তশিল্প তৈরীর কারখানা।
    উপজেলার একটি প্রত্যন্ত ইউনিয়ন বিন্নাইবাদ। একসময় দারিদ্র্যতা ছিল এ ইউনিয়নের মানুষের জীবন সঙ্গী। পুরুষরা প্রতিদিন কাজ করলেও নারীরা ঘরের কাজ শেষে অবসর সময় কাটাতেন। কিন্তু বর্তমানে ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের সে চিত্র বদলে গেছে। গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়িতে হোগলা পাতা দিয়ে বিভিন্ন বাহারি পণ‍্য তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন হস্তশিল্পের সাথে জড়িত মহিলারা। তাদের হাতে তৈরি পণ্য ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্তত ২৮টি দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কারখানা মালিকরা নারী-পুরুষদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঘরে ঘরে কর্মসংস্থানের ব‍্যবস্থা করেছেন ।
    এই সব হস্তশিল্পে কাঁচা মাল হিসেবে ব‍্যবহৃত হোগলা পাতার রয়েছে নানা ধরনের নাম। বাংলায় হোগল, হোগলা পাতা ও ধারী পাতা। ইংরেজিতে ক্যাট টেইল বা বিড়ালের লেজ। সাধারণত ৫ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার এই হোগলাপাতা রোদে শুকিয়ে বিশেষ কায়দায় এ পাতা পেঁচিয়ে প্রথমে দড়ি বানানো হয়। উদ্যোক্তারা জানান, পণ্যে ব্যবহৃত হোগলা পাতার দড়ি নোয়াখালী ও দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে আনা হয়। পরে নিজ নিজ এলাকায় দক্ষ কর্মীদের মাধ্যমে ফরমেট অনুযায়ী তৈরি পন্য সাপ্লায়ারদের সরবরাহ করা হয়।
    শুধু হোগলাপাতাই নয় এ এলাকার হস্তশিল্প কারখানা গুলোতে বাঁশ ও পাটের হস্তপন‍্যও তৈরি হচ্ছে। হোগলাপাতা, বাশ, ও পাটসহ বিভিন্ন কাঁচা মাল দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পগুলোর মধ‍্যে রয়েছে ফুলের টব, কিচেন বাক্সেট, টিস্যু বক্স, বিড়ালের বাস্কেট, ক্যারেট, শপিং বাক্সেট, ফ্লোর মেটসহ কুটির শিল্পের নান্দনিক সব জিনিসপত্র। উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন উৎসবে দেশিয় তৈরী এই সব পণ্য প্রদর্শন সহজলভ্য করা গেলে পণ্যের বিক্রির পাশাপাশি আয় বৃদ্ধি পাবে।
    বেসরকারি রপ্তানি নির্ভর শিল্পগুলোর মালিকরা বলছে, সরকারি সহযোগিতা পেলে বিদেশি উৎসবে দেশি পণ্যের অংশগ্রহণ সহজ হবে, অর্ডার বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্য রপ্তানি করেও আশানুরূপ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।
    জুহুরাকান্দা গ্রামে শফিকুল বলেন, আমাদের যতটুকু মূলধন আছে তা দিয়েই আমার বড় ভাই এলাকায় এই কারখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমান পরিমান মালের অর্ডার পেলেই আমাদের হিমসিম খেতে হয়। অর্ডার অনুযায়ী মাল তৈরির জন‍্য অতিরিক্ত মালামাল কিনতে গিয়ে কর্মচারীদের মজুরি ঠিক সময়ে দেওয়া সম্ভব হয় না। সরকার এ শিল্পে দিকে নজর দিয়ে মালিকদের আর্থিকভাবে সহায়তা বা স্বল্প সুদে ঝণ দিতো তাহলে অত্র অঞ্চলে এ শিল্পের ব‍্যাপক প্রসার ঘটতো।
    সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজের ঘরে বসেই এসব হস্তশিল্পের কাজ করার সুযোগ থাকায় জুহুরিয়া কান্দা গ্রামের অধিকাংশ নারী ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে তারা আজ স্বাবলম্বী। হোগলা পাতার আড়াআড়ি ও দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে পছন্দের কারুপণ্যের রুপ দেওয়া হয়।
    এখানকার অধিকাংশ মহল্লা ও কারখানায় দলবেঁধে চলে কারুপণ্য তৈরির কাজ। কারুপণ্য কারিগররা তাদের শৈল্পিক বিন্যাসের মাধ্যমে সাপ্লায়ারদের অর্ডার অনুযায়ী তৈরি করছেন মনোমুগদ্ধকর হস্তপণ‍্য।
    খালেদা আক্তার নামে এক গৃহবধূ বলেন, তিন সন্তান সহ পাঁচ জনের সংসার তাদের। স্বামীর কৃষি কাজ করায় অভাব তাদের সংসারে নিত‍্যসঙ্গী। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামের অন্যান্য মেয়েদের মত বিগত চার মাস আগে হোগলা পাতা দিয়ে ঝুড়ি বানানোর কাজ শিখে ওভারটাইমসহ সে মাসে ৯০০০ টাকার পায়। তার এই আয়ে বর্তমানে তার সংসার খুব ভালো চলছে বলে জানায় এই গৃহবধূ।
    শারমিন নামে অপর এক হস্তশিল্প শ্রমিক বলেন, সংসারের অভাব দূর করতে আমি গত দুই মাস আগে এই কাজে যোগ দেই। এতদিন বাবাই সংসার চালালো গত মাস তিনেক আগে অসুস্থ হয়ে তিনি বিছানা নেন। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা ব্যয় ও সংসারের বোঝা এসে ঘাড়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে আমি এই কাজের যোগ দেই। সবেমাত্র কাজে যোগ দিয়েছি তাই মাসে হাজার পাচেক টাকা পাই। এ টাকায় বাবার ওষুদ খরচে ব‍্যয় করে আর যত সামান‍্য যে টাকা থাকে সংসার খরচের লেশমাত্রও চলে না। অনেক দিন কাটাচ্ছি।

КОМЕНТАРІ •