Відео

আদাব, আমি বিদ্যুৎ দাশ। আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাঁশি কবিতার আমার ভাল লাগার কিছু বিষয় তুলে ধরব। রবি ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের একটি নক্ষত্র। তাঁর হাত ধরে বাংলা সাহিত্য নতুন মাত্রা লাভ করেন। তাঁর সাহিত্য কর্মের যথার্থ অনুসন্ধান আমার পক্ষে সম্ভব না তবুও পুনশ্চ কাব্যের ৩০ সংখ্যক কবিতা বাঁশি, কবিতার বিষয় -বস্তুটি তুলে ধরার চেষ্টা করছি। কবি, কবিতায় হরিপদ কেরানির জীবন কাহিনীর দিকটি তুলে ধরেন। তিনি তার অসচ্ছলতার বর্ণনা দিতে গিয়ে একটি টিকটিকিকে টেনে আনেন। তার অন্নের অভাব কিন্তু ওই টিকটিকির অন্নের অভাব নেই। হরিপদ কেরানি পঁচিশ টাকা বেতনে সদাগরি অফিসে কেরানির কাজ করেন, কিন্তু তার অন্নের অভাব মেটায় দত্তদের বাড়ির ছেলেকে পড়িয়ে। তিনি রাত্রি যাপন ইস্টিশনে করে আসেন এতে রাতের আলো জালানোর প্রয়োজন হয় না। ধলেশ্বরীর নদীর তীরে হরিপদ কেরানির পিসির বাড়ি। পিসির দেওরের মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে টিক ছিল ও লগ্নও শুভ ছিল। তার আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে তিনি বিয়ের লগ্ন থেকে পালিয়ে আসেন। কিন্তু যে মেয়েটির সঙ্গে তার বিয়ে টিক হয়ে ছিল, হরিপদ কেরানির কল্পনায় মেয়েটি নিত্য আসা যাওয়া করেন। কবি - কবিতায় আরেকটি চরিত্র টেনে আনেন, যার নাম গোপীকান্ত গোঁসাই। তাঁর শৌখিন মেজাজ, তিনি কর্নেট বাজাতে ভালবাসেন। কবিতায়, কবি হরিপদ কেরানির সৎ ব্যক্তিত্ব প্রকাশ কেরেছেন। হরিপদ কেরানি অসচ্ছলতা থাকা সত্বেও তার কোন উচ্চাকাঙ্খা নেই। সে বলছেন আকবর বাদশার সঙ্গে তার কোন ভেদ নেই। কবিতায় তার জীবন কাহিনীটি আমাদের নিয়ে যায় কল্পনার চরম শিখরে। হরিপদ কেরানির জীবনের নিত্য রুপ, কান্তবাবুর বাশির সুর তাকে বাঁচার আশা জোগায়। কবিতায় ফুটে উটে তার আত্মার আকুল আর্তনাদ। ধন্যবাদ স্যার।

আদাব, আমি ঋকতি বড়ুয়া রিম। ইংরেজি বিভাগ, সেশন:২০২২-২৩ইং। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে কবিতা প্রবর্তনের পর বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো গুণী সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটে, যাদের পদচারণায় বাংলা সাহিত্যের সকল শাখা আলোড়িত হয়। বাংলা সাহিত্যের কাহিনী কবিতার উদ্ভব অনেক আগে হলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেন। গীতি কবিতার সাথে মিল রেখে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের প্রকাশ ঘটিয়ে রচনা করেন কাহিনী কবিতার। যেখানে তিনি আখ্যান ও চরিত্র বিশ্লেষণের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। জটিল মিশ্রণ ঘটিয়েছেন তন্ময় ও মন্ময় কবিতার যা ঐতিহাসিক,পৌরাণিক ঘটনা ও কবির আত্ম-উদঘাটনে সাহায্য করে অনেকাংশেই। কবিতার মন্ময়তা ও নাটকীয়তা সঠিকভাবে বজায় রেখে নতুন প্রকরণে সৃষ্টি করেন কাহিনী কবিতার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাহিনী কবিতা কে পাঁচটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যার মধ্যে প্রথম শ্রেণিকে কাহিনী কবিতার ভিত্তিভূমি বা পটভূমি, দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণিকে বিকাশ পর্ব এবং পঞ্চম শ্রেণিকে সার্থক কাহিনী কবিতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “পুনশ্চ” কাব্যগ্রন্থের “বাঁশি” (২৫ আষাঢ় ১৩৩৯বঙ্গাব্দ) কবিতাটি ও একটি সার্থক কাহিনী কবিতা। এই কবিতায় এক তুচ্ছ কেরানির জীবনের রুঢ় বাস্তবতাকে দৃঢ়রেখায় এঁকেছেন কবি। সওদাগরী অফিসের কনিষ্ঠ কেরানি সে। পঁচিশ টাকা বেতন তার। কবিতা তার বাসস্থানের করুণ অবস্থার বিবরণ দেয়া হয়েছে। “স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ি”, “লোনাধরা দেয়াল” ইত্যাদির মাধ্যমে। সে বাস করে একা, সাথে এক টিকটিকি। যার সাথে তার নিজের তফাৎ হিসেবে দেখতে পায় টিকটিকির প্রতিদিন অন্ন জোটে কিন্তু হরিপদ কেরানি প্রতিদিন খেতে পায় না। খাবার যোগাড় হয় দত্তদের বাড়ির ছেলে পড়িয়ে।ঘরে আলো জ্বালানোর যেটুকু আর্থিক স্বাচ্ছল্য প্রয়োজন সেটুকু তার নেই। তাই আলো জ্বালানোর দায় বাঁচাতে “শিয়ালদা প্ল্যাটফর্ম” এ সন্ধ্যা কাটিয়ে আসে। সাড়ে দশটার পর ঘরে ফিরলে দেখে তার ঘর নিঝুম গতানুগতিক অন্ধকার;গুমট পরিবেশে বাঁচতে হয় তাকে প্রতিদিন। তার পিসির দেওরের মেয়ের সাথে তার বিয়ের লগ্ন ঠিকঠাক থাকলেও বিয়ের আগ মুহূর্তে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সে পালিয়ে আসে। কারণ তার যে করুণ দশা।এমতাবস্থায় কি করে আরেকজনের দায়ভার সে নেয়! তার ধারণা মেয়েটা তো রক্ষা পেলো এতে করে। বর্ষা এলে হয় তার অবস্থা আরো করুণ। তার “শত ছিদ্র“ ছাতাটা তার জীবনের শত ছিদ্র দশার প্রতীকী অর্থ বহন করে। এত কিছুর পরেও জীবনে একটা স্বস্তির মুহূর্ত আসে।গলির মোড়ের কান্তা বাবু, কর্নেট বাঁশি বাজানো যার শখ। সেই বাঁশির সুর যেন তার মধ্যে এক বিরহ যাতনার সৃষ্টি করে। বাঁশির সুরের মাঝে সে যেন এক অনন্ত জীবনের স্বাদ পায়। তখন তার নিজেকে “আকবর বাদশার” সঙ্গেও তুলনা করতে মন চায়। ক্ষনিকের জন্য মুছে যায় জীবন থেকে না পাওয়ার সকল গ্লানি। গতানুগতিক জীবনের মাঝে বাঁশির সুর যেন বাঁচার নতুন আসার সঞ্চার করে। সওদাগরী অফিসের হরিপদ কেরানির জীবন বিষাদের মধ্য দিয়ে বেদনার এক হিমশীতল অনুভব ছড়িয়ে দিয়েছেন কবি।হরিপদ কেরানির জীবন গল্প হয়ে উঠে ব্যক্তি-আত্মার যন্ত্রণার কাহিনী। খুব সুন্দর আবৃত্তি। ধন্যবাদ স্যার।

নমস্কার আমার নাম বিদ্যুৎ দাশ। বলাকা কাব্যটি ১৯১৬ সালে সবুজপত্র প্রত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। এই কাব্য গ্রন্থের ৩৬ সংখ্যক কবিতা বলাকা। বলাকা কবিতায় কবি মানুষের যে গতি বাদী সত্তা তার চরম রুপ দেন । বলাকা বলতে বুঝায় হাঁসের ঝাঁক। এই কবিতায় কবি প্রথম স্তবকে একটি সন্ধ্যার চিত্রকল্প তুলে ধরেছেন। সেখানে একটি ঝিলম নদী, রাতের তারা গুলো ঝিলমের জলে যেন ফুলের মতো ভেসে উঠেছে। ওই দৃশ্যটি দেখে কবির মনে হয়েছিল প্রকৃতি যেন কথা বলতে চায়, কিন্তু কিছুতেই সেই কথা ফুটছিল না। দ্বিতীয় স্তবকে কবি সন্ধ্যার গগনে হঠাৎ বলাকাদের নিরে ফিরে যাওয়ার শব্দ পেয়ে তাঁর যে নিস্তব্ধতার চিত্রটি সেটি যেন ভেঙ্গে গেল। ওই সময় কবি বলাকাদের পুরাণের অস্পরাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। চতুর্থ স্তবকে কবি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। সেই ক্ষণের নিস্তব্ধতার ঢাকনা খুলে দিল বলাকার ঝাঁক। কবি যেন নিস্তব্ধতার মধ্যেও বলাকাদের পাকার ধ্বনি শুনতে পায়। তিনি বলাকার পাকার ধ্বনির সঙ্গে মানুষের জীবনকে উপলব্ধি করে বুঝাতে চেয়েছেন, বহু মানুষের বাণী দলে দলে অলঙ্কিত পথে উড়ে চলে।অস্পষ্ট অতিত থেকে অস্ফুট সুদূর যুগান্তরের দিকে। অসংখ্য পাখির মতো দিনে-রাতে, আলো ও অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে কোন পাড় থেকে কোন পাড়ে হৃদয় বিহঙ্গ ছুটে যায় কবি নিজের অন্তরে তা শুনতে পান। কবি শেষ দুটি লাইনের মধ্যে দিয়ে স্তব্ধতাকে বা গতিবাদকে পুনরায় পুনরুজ্জীবিত করেছেন। তাইত তিনি শেষ লাইনে বলেছেন এখানে নয় অন্য কোথাও ছুটে যাওয়ার কথা। বিঃদ্রঃ - আমি তৃতীয় স্তবকটি বুঝতে পারিনি, দয়া করে যদি তৃতীয় স্তবকের ব্যাখ্যাটি বুঝিয়ে দিতেন খুব উপকৃত হতাম। ধন্যবাদ।

❤❤nice❤subcribe done❤asun anar poribere❤🙏check it🙏

আসসালামু আলাইকুম। আমি শারমিন জান্নাত।বাঁশি কবিতা হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি স্বার্থক কবিতা।কবি হরিপদ কেরানির দরিদ্রতার মাধ্যমে মানুষের বাস্তবজীবনের বিষয়টি সুন্দর ভাবে কবিতায় তুলে ধরেছেন।হরিপদ কেরানি ২৫ টাকা বেতনে চাকরি করে সচ্ছলভাবে জীবন-যাপন করতে না পারার যে যন্ত্রণা বা বেদনা সেই বিষয়টি এই কবিতায় বোঝা যায়।তার অভাব মোচন করতে তিনি নানা কৌশল অবলম্বন করেন।অভাব থাকা সত্তেও তার বিয়ের লগ্ন ঠিক হয়। সেই লগ্নে এসেছি পালিয়ে মেয়েটি তো রক্ষা পেল আমি তথৈবচ তিনি অনুভব করেন নিজের জীবন অভাবের মধ্য দিয়ে এক বিষাদময় জীবন কাটসচ্ছেন সেখানে নতুন সদস্যের জীবন দুবর্বিষহ হয়ে উঠবে এইখানেও কবির এক গভীর বেদনার কথা বলেছেন।যে যন্ত্রণার কোনো সীমা নেই তার একমাত্র কারণ দরিদ্রতা।এই বেদনাময় জীবন কাটাতে কাটাতে এমন এক সত্যের সন্ধান পান যেখানে হরিপদ এবং বাদশাহ আকবরের মধ্যে কোনো পার্থক্য পায় না।কেননা মৃত্যু কাছে সবাইকে যেতে হয় সেখানে কোনো পার্থক্য নেই। ছেঁড়া ছাতা রাজছত্র মিলে চলে এক বৈকুণ্ঠের দিকে। মানুষের জীবন দরিদ্রতার কারণে ধনী -গরীবের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায় কিন্তু মৃত্যুর সময় সবাই এক। মৃত্যু তো দেখে না কে ধনী কে গরীব তাহলে মানুষের জীবনে কেন এত বৈষম্য। কবি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন এবং তার কবিতায় মৃত্যু দিয়ে বাস্তবজীবনের বিষটি তুলে ধরেছেন যেখানে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ থাকবে না।

আদাব,আমি অমিত চন্দ্র সরকার। আমি রবী ঠাকুরের “বাঁশি” কবিতাটি পাঠ করে যা অনুধাবন করলাম তা হলো: “বাঁশি” বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের *পুনশ্চ* কাব্যগ্রন্থের একটি স্বার্থক কবিতা।** কিনু গোয়ালার জীর্ণ-শীর্ণ একটি দোতলা বাড়িতে মাত্র পঁচিশ টাকা বেতনে চাকরি করা হরিপদ কেরানির বাস। তার খাবারের যে চাহিদা, তা পূরণ হয় দত্তদের বাড়ির ছেলেকে টিউশন পড়িয়ে। আমরা যদি এক বাক্যে তার আর্থিক অবস্থা বুঝতে চাই, তবে বলা যায়, “হরিপদ কেরানি শেয়ালদা স্টেশনে সন্ধ্যাটা কাটিয়ে আসে, শুধু আলো জ্বালানোর খরচ থেকে বাঁচার জন্য।” আমাদের সমাজব্যবস্থায় যে পুরুষের নিজের ও সহধর্মিণীর ভরণপোষণ যোগান দেয়ার সামর্থ্য নেই, তার জন্য বিয়ের চিন্তা করা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ধলেশ্বরী নদীর তীরে বসবাস করা হরিপদ কেরানির এক পিসির আত্মীয়ার সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু হরিপদ যখন ভাবে, তার অর্থনৈতিক অবস্থা যেখানে অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত একটি ছাতার মতো, সেখানে সংসারে একজন নতুন সদস্য এলে তার জীবনও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। তাই বিয়ের লগ্নই হয়ে ওঠে হরিপদের পালিয়ে আসার লগ্ন। দিনশেষে কান্ত বাবুর কর্নেটের সুরই তাকে ভাবায়, আর বাস্তবে হরিপদ কেরানির জীবনে সেই মেয়েটি আসতে না পারলেও তার মনে অনবরত আসা-যাওয়া করে; পরনে শাড়ি, কপালে সিঁদুরে সজ্জিত সেই বধূবেশী মেয়েটি।

আসসালামু আলাইকুম আমি আয়েশা সিদ্দিকা। বলাকা (১৯১৬)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ গুলির মধ্যে অন্যতম। বলাকায় যুদ্ধ যৌবন, গতি, মৃত্যুচিন্তা প্রভৃতি বিষয়ক কবিতা রয়েছে। কিন্তু বলাকার মূল সুর গতিবাদের। বলাকা কাব্যের সবচেয়ে চমকপ্রদ কবিতা “বলাকা”। ।কাশ্মীরের এক সন্ধ্যাকালে ঝিলাম নদীতে বসে যখন কবি ভাবনায় বিভোর সেই ক্ষণে একঝাঁক বলাকা উড়ে যেতে দেখলেন কবিগুরু। চলার গতির একটা বেগ যেন কবির নয়নের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। সেই যাত্রার ধ্বনি শুনে সমগ্র বিশ্বের সর্বত্র যেন জেগেছে একটা যাত্রার বেগ। সৃষ্টিজগতের অপার রহস্য এবং জীবকুলের ভাবপ্রকাশের আকুলতাকে কবি ধরতে চেয়েছেন কবিতার রহস্যঘেরা অন্য এক ফ্রেমে। তিনি জানেন মানুষ তার মনের ভাব ব্যক্ত করতে চায়; নিজেকে মেলে ধরতে চায় অন্যের কাছে। কবির মনে হয়েছে মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীও যেন কথা বলতে আগ্রহী; হয়তো এরকম স্বপ্নও দেখে তারা; কিন্তু অসহায় সব জীব প্রকাশ করতে পারে না কোনো অভিব্যক্তি। ভেতরে ভেতরে গুমড়ে কেঁদে মরা ছাড়া তাদের জন্য আর কোনো পথ খোলা থাকে না। কবির ভাষায়; “মনে হল সৃষ্টি যেন স্বপ্নে চায় কথা কহিবারে,/বলিতে না পারে স্পষ্ট করি,/অব্যক্ত ধ্বনির পুঞ্জ অন্ধকারে উঠিছে গুমরি। ” (বলাকা) কবিতার এই অংশটি আমার প্রিয়।

আসসালামু আলাইকুম আমি আয়েশা সিদ্দিকা। কবি জীবনানন্দ দাশ বনলতা সেন কবিতায় মূলত তাঁর আত্মচেতনাকে এক গভীর ভাবের আলোকে উদ্ভাসিত করেছেন। তিনি নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন মানবপ্রতিনিধি হিসেবে, যিনি জন্মজন্মান্তর ধরে এতটুকু শান্তির আশায় পথ হাঁটছেন। কিন্তু কেউ তাকে শান্তি দিতে পারেনি। কবি এই হাজার বছরেরর পথ পরিক্রমায় সুদূর অতীত যেমন প্রত্যক্ষ করেছেন তেমনি আধুনিক যুগের বা বর্তমান পৃথিবীর অস্থিরতাকে এবং ঝড়ক্ষুব্ধ অবস্থাকেও দেখেছেন। কবি এত কিছু প্রত্যক্ষ করে বুঝেছেন কোথাও এতটুকু শান্তি নেই। শান্তি কেবল নারীর অকপট প্রেমে, নারীর কোমল পরশে, নারীর মমতাময়ী আশ্রয়ে। মূলত কবির এই অনুভবই মূর্ত হয়ে উঠেছে বনলতা সেন কবিতায়। প্রকৃতপক্ষে বনলতা সেন কোন বিশেষ নারী বা ব্যক্তিসত্তা নয়,সে হৃদয়বান এবং প্রেম ও শান্তির প্রতীক এক চিরন্তন মানবী সে আবহমানকাল ধরে প্রেম প্রীতি ও শান্তির ধারাকে অব্যাহত রেখেছে এবং শত প্রতিকূলতার মধ্যেও রাখবে। কবিতার প্রারম্ভিক পংক্তি হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি, এত কোন ব্যক্তির প্রেম ও শান্তির অন্বেষায় পথযাত্রা নয়, বরং চিরকালের মানব যাত্রার অন্য নাম,বলে আমার মনে হয়। স্যার কবিতাটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে আপনার মন্তব্যও আশা করছি। ধন্যবাদ।

আসসালামু আলাইকুম আমি আয়েশা সিদ্দিকা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরুদ্ধে মানুষের অভিযোগ ছিল প্রকৃতিদৃশ্যে ভরপুর হলো রবীন্দ্রকবিতা।তিনি কেবল প্রকৃতিলোক ভাবলোক নিয়েই কবিতা লিখেছেন। অন্ত্যজ মানুষের কথা বলেন নি। প্রত্যহের জীবনযাত্রার কথা বলেন নি। কিন্তু তাঁর পুনশ্চ কাব্যগ্রন্হে বাস্তবজীবন ও মানবসংসার,অন্ত্যজ নরনারী,বস্তুময় প্রকৃতি,প্রত্যহের জীবনযাত্রা সবই এসে জড়ো হলো গদ্যআঙ্গিকে। এই কাব্যগ্রন্হেরই একটি কবিতা বাঁশি। এই কবিতায় হরিপদ কেরানির কথা বলা হয়েছে, যিনি বাস করেন এঁদোগলিতে,পঁচিশ টাকা বেতেনের চাকরি করেন। সে সঙ্গীহীন,সন্ধ্যেবেলা শেয়ালদা স্টেশনে কাটায় যাতে ঘরে আলো জ্বালাবার খরচটা বাঁচে। তার জীবনের একমাত্র গল্প হচ্ছে ধলেশ্বরী নদীতীরে পিসিদের গ্রামে বিয়ের লগ্ন ঠিক হয়েছিল "সেই লগ্নে এসেছি পালিয়ে মেয়েটা তো রক্ষে পেলে, আমি তথৈবচ ঘরেতে এল না সে তো,মনে তার নিত্য আসা যাওয়া পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর।" তার হতচ্ছিন্ন জীবনে এটাই একমাত্র বিরহমধুর স্মৃতি।একঘেয়ে জীবনে তার বসবাস,কিন্তু বীভৎস গলির বাতাসে কখনো কখনো সুর জেগে উঠে। আর এই সুর ক্লেদাক্ত বাস্তব থেকে হরিপদ কেরানিকে ঊর্ধ্বলোকে নিয়ে যায়।তাতে চাপা পড়ে যায় শ্রেণিসত্য।আকবর বাদশাহর সঙ্গে হরিপদ কেরানির আর কোন পার্থক্য থাকে না, তার ছেঁড়া ছাতাকে মনে হয় রত্নখচিত রাজছত্র। কবিতাটি আমার খুব পছন্দের।

আসসালামু আলাইকুম আমি আয়েশা সিদ্দিকা। বিদ্রোহী কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৮ সালের কার্তিকে ২য় বর্ষের ৩য় সংখ্যক ' মোসলেম ভারত' পত্রিকায়।এই কবিতাটির জন্য নজরুলের ওপর অজস্র ব্যঙ্গবিদ্রুপ বর্ষিত হয়। কিন্তু এসব ব্যঙ্গবিদ্রুপ নজরুলের পক্ষে শাপেবর হয়ে দাঁড়ায়। কবিতাটি বহুল আলোচিত হওয়ায় অভূতপূর্ব প্রচারের সাফল্য লাভ করে। কবি নজরুলের পরিচিতি এবং খ্যাতি দুই - ই বহুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এই কবিতাটির জন্য।সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বারা পদদলিত এদেশ দীর্ঘকাল শাসন-শোষণ,অন্যায়-অবিচার আর বৈষম্যের পঙ্কিলতায় আচ্ছন্ন থেকেছে। একজন যথার্থ কবি তাঁর সমাজ,দেশ,রাজনীতি ও সংস্কৃতির মধ্যে শিকড় ছড়িয়ে দিয়ে যে রস গ্রহণ করেন তাই তাঁর কাব্য ফসলের প্রাণশক্তি।সমাজ সচেতন কবি তাই সমাজ, রাষ্ট্রের অবিচার ও বৈষম্যের প্রতি তার বিপ্লবী মনের প্রতিবাদ জানাতে কুন্ঠিত নন। পৃথিবীজুড়ে যে অন্যায়,অবিচার আর বৈষম্য তার বিরুদ্ধে তাঁর এই বিদ্রোহ, প্রতিবাদ উচ্চকিত থাকবে, যতদিন না তার মূল উৎপাটিত হবে। তাই তো কবি বলেছেন - "যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ ভূমি রণিবে না, বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত।"

আমার অসম্ভব ভালোলাগা একটি কবিতা।কবিতার শব্দ মাধুর্য দেখে অনেকেই মনে করেন কবিতা শুধুমাত্র রোমান্টিক প্রেমের প্রকাশ। হয়তো বা কল্পনা বিলাসী কবির কল্পনা মানসীর অনুসন্ধান! কিন্তু আমরা একটু গভীরভাবে জীবনানন্দ দাশ কে অধ্যায়ন করলে বুুঝতে পারি যে বাংলা সাহিত্যের ত্রিশের দশকের প্রতিনিধিস্থানীয় কবি জীবনানন্দ দাশের কাব্যে বড় একটা অংশ জুড়ে সমকালীন সমাজ বাস্তবতাকে স্থান দিয়েছেন। কবির সময় কে যদি একটু লক্ষ্য করি দেখব ১৯১৪-১৯১৮ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, অসহযোগ আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ১৯৩৯ এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু,৪২/৪৩ এর দিকে মহামারী, এস কিছু কবি মানসকে প্রবল ভাবে নাড়া দিয়েছেন। পুঁজিবাদের আগ্রাসন, নগরায়ন, চোখের সামনে ভেঙে যাচ্ছে কবির চিরচেনা সংস্কৃতি। পুরো পৃথিবীর ব্যাপী বিচ্ছিন্নতাবোধ,নাগরিক জীবনের ক্লান্তি, অন্তঃসারশূল্য ফাঁপা মানুষ। এই যে প্রতিকূল সমাজবাস্তবতায় দাঁড়িয়ে কবির মনের বিচ্ছিন্নতার বহিঃপ্রকাশ তাঁর প্রায় সমস্ত কবিতা। এক একটা মুহুর্ত কবির কাছে হাজার বছরের পথ চলার মত ক্লান্তিকর...কিন্তু নির্মম বাস্তবতায় দাঁড়িয়েও আশাবাদী... তাইতো ক্ষণিকের জন্য হলেও সুন্দর সুস্থ শান্তিপ্রিয় পৃথিবীর প্রত্যাশা করেছেন নাটরের বনলতা সেন এর রূপকে। আমার এই আলোচনাটি বিষয়গত দিক থেকে...সাহিত্য সমালোচনার মাপকাঠিতে বিস্তর তথ্য সংযোজন প্রয়োজন ছিল।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ❤️

Nice voice ❤ sathe thaklam.

আসসালামু আলাইকুম। আমি সিমিল। "বাঁশি" কবিতার আমার পছন্দের অংশটুকু হলো: ' হঠাৎ খবর পাই মনে আকবর বাদশার সঙ্গে হরিপদ কেরানির কোনো ভেদ নেই। বাঁশির করুণ ডাক বেয়ে ছেড়াছাতা রাজছত্র মিলে চলে গেছে এক বৈকুন্ঠের দিকে।' হরিপদ কেরানির মূল সমস্যা দারিদ্র্য, সেকারণে দায়িত্বগ্রহণে অপরাগতা এবং তজ্জনিত হাহাকার। উল্লেখিত অংশে, কবি " আকবর বাদশার" সাথে "হরিপদ কেরানির" কোনো তফাৎ খুঁজে পাননি। কেননা মৃত্যু নামক সত্যের কাছে বাদশা কিংবা সাধারণ মানুষের কোনো পার্থক্য নেই। মৃত্যুর বাস্তবতা অভিন্ন তাই "এক বৈকুন্ঠের" দিকে সবাইকে যেতে হয়। বাঁশি প্রাণের সুরকে ধরে রাখে একারণে "বাঁশি" শব্দটি ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে ব্যক্তিত্বের একটি মূলবিষয় এখানে পরিস্ফুট হয়ে ওঠেছে। 'বাঁশি' কবিতায় "হরিপদ" নামক এক তুচ্ছ কেরানির জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত আটপৌরে ভাষায় বাস্তবের নিখুঁত বণর্না ফুটে উঠেছে। দ্বিতীয়ত, "কান্তবাবুর কর্নেটের সুরে" ভেসে ওঠে 'অনাদিকালের বিরহ বেদনা।' "বিরহবেদনা", "রাজছত্র", "গোধূলিলগ্ন" ইত্যাদি কাব্যিক শব্দগুচ্ছ এবং 'বহি চলে ধলেশ্বরী ' পংক্তি ব্যক্তির স্বপ্নকল্পনাকে সুদূরপ্রসারী করে তুলেছে। পরিশেষে, 'যে আছে অপেক্ষা করে, তার পরনে ঢাকাই শাড়ি, কপালে সিঁদুর ' পংক্তিটি পুনরাবৃত্ত হয়ে মানবাত্মার স্বপ্নকল্পনার জয়ধ্বজা উড়িয়েছে। আমি এই অংশের " আধমরা জগত" বলতে কোন জগতকে বুঝানো হয়েছে তা বুঝিনি। ' দিন রাত মনে হয়, কোন্‌ আধমরা জগতের সঙ্গে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে আছি।' সার্বিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ স্যার। আপনার পরামর্শে আমরা সঠিক উৎস থেকে কবিতাটি পাঠ করতে পেরেছি। আসসালামু আলাইকুম।

বাহ্ দারুন , subscribe করে @জয়শ্রীর কথামালা থেকে বন্ধু হলাম ❤❤